সংবাদদাতা:
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নে সরকারের সহযোগিতায় দেশি-বিদেশী কোম্পানির নতুন ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা, সামাজিক ও মানবিক মর্যাদা, অধিকার, স্বাধীনতা, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জনপদ, বাস্তুভিটা, ফসলী জমি, জীববৈচিত্র্য, নদী, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অনাগত প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষায় “ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলন” এর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ ৩,এপ্রিল ধলঘাটা সুতুরিয়া বাজার সংলগ্ন সুতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলন প্লাটফর্মের সংগঠক আব্দুল মান্নান রানা’র সঞ্চালনায় এতে স্বাগত কথা বলেন, আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব মোস্তাফা মুকুল।
এ সময় আলোচকবৃন্দের বক্তব্যে তরুণ সংগঠক নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকার দেশিবিদেশী কোম্পানির সহযোগিতায় অধিগ্রহণের যে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সেখান থেকে যেন অনতিবিলম্বে ফিরে আসে। অন্যথায়, স্থানীয় জনগণ কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব মাহমুদুল করিম বলেন, সরকারের প্রতি আহবান যেন এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, নদী ও সাগর, চাষাবাদের জমি ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বাস্তুভিটার স্থায়ী সুরক্ষা নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে ধাবিত হয়। জনগণের মতকে উপেক্ষা করে কোনো ধরণের কৃত্রিম উন্নয়ন স্থানীয় জনগণ সমর্থন করে না।
আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব হুজাইফুল ইয়াসরাব বলেন, আমরা আর এক ইঞ্চি জায়গাও অধিগ্রহণ করতে দিতে চাই না। এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ধলঘাটার উর্বর জমি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, নদী, সাগর এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের বাস্তুভিটা রক্ষা করা। কোম্পানিরা মানুষের কল্যাণ করে না বরং শোষণ করে। আমরা কোম্পানির বিরুদ্ধে এবং যারা তাদের মদদপুষ্ট হয়ে মাতৃভূমি ধ্বংসের পায়াতারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেন।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মাস্টার আমিনুল হক বলেন, এই অঞ্চলে বন্দর নির্মাণের নামে নতুন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা, মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা, অধিকার ও স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলন প্লাটফর্মের সংগঠক আমিনুল হক বলেন, আমেরিকান কোম্পানি জেনারেল ইলেক্টনিক্স, জাপানের মিতসুবিশি ও জিরা, সামিট গ্রুপ আমাদের জনজীবন ও বাস্তুভিটা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিদের ইন্টেশন ভাল নয়। তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন কোম্পানি ও ষড়যন্ত্রকারীদের পাবলিকলি বয়কট করুন। অন্যথায়, আমাদের চিরকালের জন্য মর্যাদাহীন জীবনযাপন করতে হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নুরুল ইসলাম বাঁশি ও নাছির হায়দার বলেন, স্থানীয়দের জীবনজীবিকা সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে রূপ নিয়েছে। সরকার ও দেশি-বিদেশী কোম্পানি আজকে ১০ বছর যাবৎ লক্ষ কোটি টাকা বাজেটের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার কাজ করলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কিঞ্চিৎ পরিমাণ উন্নয়ন তারা নিশ্চিত করেনি।
সমাজকর্মী গিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমাদের শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকতে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার অবলম্বন, মাতৃভূমি, বাস্তুভিটা কোনো কিছুর বিনিময়ে কোম্পানিদের হস্তান্তর করতে পারিনা। এটি আমাদের অস্তিত্ব। অস্তিত্বহীন মানুষ কখনও জীবনের মূলধারায় বসবাস করতে পারেন। আমরা যাযাবর হয়ে বাঁচতে চাই না। আমাদের বাপদাদার ভিটেমাটিতে সামাজিক সম্প্রীতি ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের ধলঘাটাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ সরল বঠে তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে ৩শত বছরের সামাজিক সম্প্রীতিপূর্ণ জনপদ তৈরি করেছে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সহযোগিতা করতে বহু জমি ইতিমধ্যে ধলঘাটার মানুষ ত্যাগ করেছে। নতুন করে আবার ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা কেবল কোম্পানিদের চাহিদাপূরণ ব্যতীত কিছু না। আমরা নতুন ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এতে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, ধলঘাটা রক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব এস্তাখাব উদ্দিন, সোহেল রানা, বখতিয়ার, সুজন মোহাম্মদ শাকিল, ইয়াছিন আরাফাত, সমাজকর্মী আব্দুস সালাম ও মনজুর আলম রাজনীতিক নুরুল আলম পুতু, নুরুল ইসলাম খান,
তরুণ সংগঠক রবিউল ইসলাম, সায়েদ হোছাইন, সমাজসেবক নুরুল গাফফার সহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ।
ধলঘাটার ভূমি, পরিবেশ, অধিকার ও অনাগত প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষার আন্দোলনে সংহতি জানাতে এ সময় স্থানীয় নারী, পুরুষ, শিশুকিশোর, তরুণ নেতৃত্ব, পরিবেশবাদী সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।